Class 11 Nutrition Long Question Answer
Class 11 Nutrition Notes WBCHSE Board
পুষ্টির পর্যায়
খাদ্য ও পুষ্টির সম্পর্ক
অপুষ্টির কারণ ও সমস্যা
Class 11 Nutrition |
মানবদেহে পুষ্টির পর্যায়গুলি লেখাে।
উত্তর:
মানবদেহে পুষ্টি পাঁচটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। সেগুলি সম্পর্কে নিচে আলােচনা করা হল -
প্রথম পর্যায় - খাদ্য গ্রহণ:- যে প্রক্রিয়ায় খাদ্যবস্তু মুখবিবরে গৃহীত হয় তাকে খাদ্যগ্রহণ বলে। এই পর্যায়ে বাহ্যিক কোনাে উৎস থেকে খাদ্যবস্তু গৃহীত হয়। হাত, দাঁত, ওষ্ঠ এবং জিহ্বা আমাদের খাদ্য গ্রহণে সাহায্য করে।
দ্বিতীয় পর্যায় - পরিপাক:- এই পর্যায়ে গৃহীত কঠিন ও জটিল খাদ্যবস্তু বিভিন্ন উৎসেচকের সহায়তায় তরল ও সরল খাদ্যে পরিণত হয়ে শােষণ ও আত্তীকরণ এর উপযােগী হয়৷ মানবদেহে খাদ্যের পরিপাক সম্পন্ন হয় প্রধানত মুখগহ্বর, পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রে।
তৃতীয় পর্যায় - শোষণ:- এই পর্যায়ে পাচিত খাদ্যরস ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলাই অংশের মাধ্যমে শােষিত হয়ে রক্তের মাধ্যমে কোষের মধ্যে প্রবেশ করে।
চতুর্থ পর্যায়- আত্তীকরণ:- এই পর্যায়ে শােষিত খাদ্য রস সকল প্রকার দেহকোষের প্রােটোপ্লাজমে অংশীভূত হয়। বিভিন্ন কলাকোষে আত্তীকরণ সম্পন্ন হয়৷
পঞ্চম পর্যায়-বহিষ্করন:- এই পর্যায়ে অপাচ্য খাদ্য বস্তু দেহ থেকে নির্গত হয়। অপাচ্য খাদ্যবস্তু বৃহদন্ত্রে এসে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মলে পরিণত হয় এবং মলাশয়ে সাময়িক ভাবে সঞ্চিত থাকার পর পায়ু দিয়ে দেহের বাইরে নির্গত হয়।
পুষ্টির পর্যায়গুলি চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হল:
চিত্র ১: পুষ্টির পর্যায় |
চিত্র ২: পুষ্টির পর্যায় |
খাদ্য ও পুষ্টির পারস্পরিক সম্পর্ক আলােচনা করাে।
উত্তর:
খাদ্য ও পুষ্টি:- যে আহার্য বস্তু গ্রহণ করলে জীবদেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ ঘটে, রােগ ও অপুষ্টি থেকে দেহ রক্ষা পায় এবং দেহে শক্তি উৎপন্ন হয়, তাকে খাদ্য বলে। অপরদিকে, খাদ্য যেসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে জীবের দেহগঠন, ক্ষয়পূরন এবং বৃদ্ধি সাধনে অংশগ্রহণ করে এবং জীবকোষে স্থৈতিক শক্তির সঞ্চয় ঘটায়, তাকে পুষ্টি বলে।
খাদ্য ও পুষ্টির পারস্পরিক সম্পর্ক:- খাদ্য ও পুষ্টির সম্পর্ক খুবই নিবিড়। খাদ্য হল কারণ এবং পুষ্টি হল তার ফল।জীবের জীবনধারণের জন্য খাদ্য অপরিহার্য বস্তু এবং পুষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। জীবদেহে খাদ্য গৃহীত না হলে পুষ্টি প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়৷ জীবদেহে খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিপােষক গৃহীত হয় যা দেহ গঠন, জীবদেহের বৃদ্ধি এবং ক্ষয়পূরণ, প্রভৃতিতে সাহায্য করে। এই কাজ গুলি করার জন্য খাদ্য থেকে পরিপােষকের মুক্তি, শােষণ এবং আত্তীকরণ এর প্রয়ােজন আর এই সমস্ত কাজগুলি পুষ্টির মাধ্যমেই সম্ভব হয়। অর্থাৎ জীবদেহে খাদ্য গৃহীত হলে, পুষ্টির মাধ্যমে তা দেহের যথাযথ বৃদ্ধি, গঠন, ক্ষয়পূরণ প্রভৃতিতে অংশ নেয়। আবার পুষ্টির মাধ্যমে জীবদেহে খাদ্যের যে সঞ্চয় ভান্ডার গড়ে ওঠে, তার থেকে বিভিন্ন প্রকার জৈবনিক ক্রিয়াগুলি পরিচালনার জন্য প্রয়ােজনীয় শক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন খাদ্যের পরিপাক, শােষণ ও আত্তীকরণ এর পর পুষ্টির মাধ্যমে সংগৃহীত বিভিন্ন বস্তু থেকে জীবদেহে বিভিন্ন প্রকার হরমােন, উৎসেচক ইত্যাদি উৎপাদনে সাহায্য করে। অতএব, খাদ্য ছাড়া পুষ্টির কথা ভাবাই যায়না। সুতরাং বলা যায় পুষ্টি এমন এক প্রক্রিয়া যা খাদ্যকে দেহের উপযােগী করে তােলে এবং খাদ্যের মাধ্যমে দেহের প্রয়ােজন পূরণ করে।
বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ ম্যাকক্যারিসন বলেছেন খাদ্য হল পুষ্টির জোগানদার এবং পুষ্টি হল খাদ্যকে কার্যকরী করার প্রক্রিয়া।
Causes of malnutrition in India
ভারতবর্ষে অপুষ্টির কারণ ও সমস্যাগুলি লেখা।
অথবা,
অপুষ্টির কারণগুলি লেখাে
অথবা,
আমাদের দেশে ঊনপুষ্টির কারণগুলি লেখো।
উত্তর:
অপুষ্টির সংজ্ঞা:- আহার্যে এক বা একাধিক পরিপােষক না থাকলে বা অধিকমাত্রায় থাকলে বা অন্য পরিপােষকের সঙ্গে সঠিক অনুপাতে না থাকলে পুষ্টিক্ষেত্রে যে ত্রুটি দেখা যায় তাকে অপুষ্টি বলে।
ভারতবর্ষে অপুষ্টির কারণ:- ভারতবর্ষে অপুষ্টি একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। বিভিন্ন কারণে এই সমস্যাটি দেখা যায়। নিচে কয়েকটি সমস্যার কথা আলােচনা করা হল:-
i. অজ্ঞতা:- খাদ্য বিষয়ে অজ্ঞতা অপুষ্টির একটি অন্যতম কারণ। জীবনের বিভিন্ন দশায় এবং বিভিন্ন অবস্থায় যে বিশেষ ধরনের খাদ্য প্রয়ােজন সে বিষয়ে অনেকেরই ধারণা থাকে না। বিভিন্ন রকমের খাদ্যের পুষ্টি মূল্য এবং খাদ্যে কীভাবে পুষ্টি মূল্য বজায় রাখতে হয় সে বিষয়ে সাধারণ মানুষের জ্ঞান না থাকায় মানুষ অপুষ্টির শিকার হয়।
ii. দারিদ্রতা:- আর্থিক সচ্ছলতা না থাকা এবং দারিদ্র অপুষ্টির একটি অন্যতম বিশেষ কারণ। ভারতবর্ষের অধিকাংশ মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকার কারণে উপযুক্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য ক্রয় করে খেতে পারে না, অতি সস্তায় নিম্ন পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করে। যার ফলে অপুষ্টির শিকার হতে হয়।
iii. সামাজিক ও ধর্মীয় কারণ:- কিছু কিছু সম্প্রদায়ের মানুষ সামাজিক প্রথা ও ধর্মীয় কারণের বশবর্তী হয়ে নানান খাদ্য বর্জন করে বা বর্জন করতে বাধ্য হয়। এইসব খাদ্যের মধ্যে বেশ কয়েকটি খাদ্যই স্বাস্থ্যরক্ষায় বেশ প্রয়ােজনীয়৷ যেমন - কিছু সম্প্রদায়ের মানুষ মাছ, মাংস, ডিম খায় না। ফলে দেহে প্রোটিনের অভাব দেখা দেয়।
iv. রােগ সংক্রমণ:- ভারতবর্ষে বেশিরভাগ মানুষই রােগ জ্বালায় ভুগে থাকে। কিছু রােগ আছে যা হলে মানুষকে অনেক খাবার খাওয়া চলে না। যেমন - মধুমেহ হলে অনেক খাদ্যই খাদ্য তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায় যার ফলে মানুষ অপুষ্টিতে ভুগতে থাকে।
v. পরিবেশগত কারণ:- দীর্ঘদিন ধরে ঘরে না থাকা, অসময়ে খাদ্য গ্রহণ, অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে খাদ্য গ্রহণ, শিশুদের খাদ্য গ্রহণের সময় বকাবকি করা বা ভদ্রতা শেখানাে প্রভৃতি কিছু কারণ অপুষ্টির কারণ হয়ে দাড়ায়। তাছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন - খরা, বন্যা প্রভৃতির সময় খাদ্যের অভাব দেখা দেয় যার ফলে মানুষকে অপুষ্টির শিকার হতে হয়।
অপুষ্টির সমস্যা:- অপুষ্টির কারণে মানবদেহে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়, সেই সমস্যাগুলি সম্পর্কে নিম্নে আলােচনা করা হল-
i. রাতকানা:- মানবদেহে ভিটামিন A এর অভাব হলে এই রােগ হয়। এই রােগের ফলে কম আলােয় দৃষ্টি ব্যাহত হয়।
ii. ম্যারাসমাস:- খাদ্যে প্রােটিনের ঘাটতির পাশাপাশি ক্যালােরির পরিমাণের ঘাটতি হলে ছয় মাস থেকে দেড় বছর বয়সী শিশুদের এই রােগ দেখা যায়। এই রােগে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ স্থায়ী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
iii. কোয়াশিওরকর:- খাদ্যে উপযুক্ত প্রােটিন ও ক্যালােরির অভাবের কারণে মানবদেহে এই রােগ হয়। সাধারণত এক থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়। এই রোগ শিশুদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
iv. অ্যানিমিয়া:- লৌহ, তামা, ভিটামিন B12, ফোলিক অ্যাসিড অ্যাসকরবিক অ্যাসিড প্রভৃতির অভাব হলে দেহে অ্যানিমিয়া রোগ হয়। এই রোগের কারণে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায়।
v. স্কার্ভি:- মানবদেহ ভিটামিন C এর অভাবজনিত কারণে এই রোগ হয়। এই রোগে মাড়ি স্পঞ্জ হয়ে যায়, মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে এবং অ্যানিমিয়া দেখা দেয়।
vi. গলগণ্ড:- আয়োডিনের অভাবজনিত কারণে মানবদেহে গলগণ্ড রোগ দেখা দেয়। এই রোগে থাইরয়েড গ্রন্থি বৃদ্ধি পায় এবং হৃদস্পন্দন কমে যায়।
tags:
nutrition science
class 11 nutrition
nutrition suggestion
basic concepts about food
malnutrition
0 Comments
Please do not enter any spam link in the comment box.